Tuesday, 26 August 2014

বৃষ্টির জলে নিভে গেল চোখ (৪৯)

বৃষ্টির জলে নিভে গেল চোখ
অঙ্কুর কুন্ডু


                     কাল রাত বারোটায় বা বারোটা পাঁচে কিংবা বারোটা দশে
                     . . . বারো-কে যখন ছোট কাঁটা ছুঁয়ে ছিল , হঠাৎ
                     তখন নেমেছিল বৃষ্টিটা বা নেমেছিল বৃষ্টিগুলো
                               নুপুরের ঝুম্-ঝুম্ শব্দে অথবা রাস্তায় হাঁটা
                               জীবন্ত মানুষের মাথা বেয়ে ঝম্-ঝম্ শব্দে ৷

                     দালান গিয়েছে ভিজে , চারিদিকে জুঁই-এর গন্ধ ,
                     দালান রয়েছে একা , চারিদিকে জুঁই-এর গন্ধ ,
                     প্রশ্বাস নেই ! ভিজে ঝোপ থেকে কিছু নরম ডানার মশা
                               দুর্বিপাকে পাক খাচ্ছে সাড়ে তিন হাত উঁচুতে
                               ফ্যাতাড়ুদের মত ৷ কাল বৃষ্টি হয়েছিল অবিরত ৷

                     চার-পাঁচটি পিঁপড়ে আরও পাঁচ-ছয়টি পিঁপড়েদের
                     সাত-আটটি পিঁপড়ে ডাকতে বলে এগিয়ে গেল -
                     নরম মাটির ওপর ওদের পা কোনো ছাপ রাখেনি ,
                               অথচ ওদেরও শরীরের ওজন আছে
                               মানুষের মত –তবু বৃষ্টি ওদের অস্বীকার করেছে ৷

                     বৃষ্টিটা মাটির সাথে আটকে আছে এবং
                     রোদের সাথে আড়ি করেছে আজ সকালে , অথবা
                     আবার আজ ঝরবে বলে গুমরে আছে মেঘের কোলে ,
                               কাল এভাবেই গুমরে ছিল বাউল ঐ দালানের
                               ঐ দেওয়ালে ; আজও আছে ঐ দালানের ঐ দেওয়ালে ৷

                     একতারাটি হাতের কাছেই , হাতের পাশেই ,
                     তবু আঙুল থেকে দূরে ৷ বাউল আর বাঁধবে না সুর
                     তাই তো গেল সরে –
                               নিঃসঙ্গতা বোধহয় এভাবেই জীবন কেড়ে নেয় ,

                               যেমন হঠাৎ বৃষ্টি এসে চোখ বুজে দেয় ৷

ফিরিয়ে দেব আমি (৪৮)

ফিরিয়ে দেব আমি
অঙ্কুর কুন্ডু


                        কথা হয়েছিল সাদা শঙ্খধ্বনি ঘামরূপে বয়ে যাবে
                        তোমার-আমার লোমকূপে , যেখানে হাত পাতবে
                        শ্যাওলা মেঘ অন্তরীক্ষের সমীপে –
                                     মুষ্টিবদ্ধ কিছু সব্যসাচী এগিয়ে যাবে
                                     কোনো এক এসপ্ল্যানেডের মোড়ে ,
                                     ছুঁয়ে যাবে প্রতিটা মাথা রক্তক্ষয়ী আদরে ৷
                        তোমাকে . . তোমাকে . . তোমাকে প্রশ্ন করেছি বহুবার –
                        একবার উত্তর পেয়েছি , শর্ত দিলে কিছু পাওয়ার
                        আকাশ ফুঁড়ে বলেছিলাম আমি আছি !

                        পুরানো অনেক পাথর ফেটে গেছে কবরখানায়
                        কেউ মস্তকহীন খবর , যারা আছে তারা হাঁপায়
                        কাল যারা চলে গেল তারা যাযাবর –
                                     বেড়ি-বাঁধা কতিপয় পা হেঁটেছিল
                                     দৃপ্ত কন্ঠের মাঝে বিরতি না রেখে
                                     যাদের শরীর পড়ে ছিল সাদা থানে ঢেকে ৷
                        বহু রাত আমি একা হেঁটেছি কু-য়া-শা-র সাথে –
                        আলতো পা-এর ভরে , ক্লান্ত চোখ প্রতি রাতে
                        দেখেছে ফুটপাথ ক্রমশ যাচ্ছে সরে ৷

                        আঁতুড়ঘরে সময় নষ্ট হয়েছে অনেক
                        কান্নার ডাকে , দরজার বাইরে প্রত্যেক
                        মানুষ একজনকেই খোঁজে . . . কাকে !
                                     হাতে যারা স্বপ্ন বন্দী করেছে
                                     ও হাওড়া ব্রিজের দিকে তাকিয়ে
                                     বুক বেঁধেছে , গঙ্গার বুকে তারা ভেসে গেছে ৷
                        রেললাইন ধরে এগিয়েছি দিনের আলোয় –
                        কয়েকটি পাথর সাথে নিয়ে , চারিদিকে প্রলয়
                        তবু ঐ শরীরটা মরেছে জন্ম দিয়ে !

                        কথা হয়েছিল জানালার বাইরে চোখ রেখে
                        রাতটা দেব কাটিয়ে , ঘাড়ের ওপর মুখ ঢেকে
                        যারা চলে গেল সকালের আগে তারাই দিল নাড়িয়ে !
                                     ব্যাগ-কাঁধে স্কুলে ছুটির ঘন্টা
                                     না মেনে দৌড়ায় কিশোর
                                     লাশগুলো রাত চায় , সে চায় ভোর ৷
                        অতর্কিতে অল্প আলো ধাক্কা দিয়ে –
                        গড়তে চায় সমভূমি , সব কান্না সাথে নিয়ে

                        ভোরবেলায় আগামী ফিরিয়ে দেব আমি !

গ্লুম : নিরাশ্রয়ী ধাক্কা (৪৭)


       
       গ্লুম : নিরাশ্রয়ী ধাক্কা
          অঙ্কুর কুন্ডু


বুকের পলকা চুল অতি ক্ষীণ ,
বুকের পশলা চুল আরও নিবিড় ;
       কালো পিচের রাস্তায় দু’একটা জালিয়াৎ ধরা পড়ে ৷
দু’পাশে যদি গাড়ি চলে যায়
বুকে হাত দিয়ে দেখি . . . আছে তো !

বাথরুমে বসে ভাবি বয়স হয়েছে অনেক ,
বাথরুমের দেওয়াল ধরে পা তুলতে ভয় পাই ,
প্রস্রাব দিয়ে ঠিকমতো রং ছড়াতে পারিনা ;
অন্ দ্য স্পট্ ঢাকনা ছুঁড়তে পারিনা ;
       সবাই কুকুর নয় , অনেকে নিশ্চয় কুকুর ৷
       অনেকে কুকুর নয় , কেউ একজন ছোট্ট বাচ্চা ৷
যদি হঠাৎ লোডশেডিং হয়
আমিও হঠাৎ ঘাড় তুলে দেখি আলো নেই
আবার নীচে তাকাই যখন , বুঝি ব্যথা বসেছে
ঘাড়ে , আলতোভাবে টিপে দেখি . . . আছে তো !

নিভৃতে আলো নড়ে , আলো দাঁড়িয়ে থাকে
নিভৃতে চোখ কাঁপে , চোখ কেঁপে যায় ;
আজকাল –বয়সটাও নিস্তব্ধ -
কোনও বছরে জ্বলে না মোমবাতি , অথচ
জ্বলছে নুড়ো , গিলছে মুড়ো , আগের মতোই
রাস্তা হচ্ছি পার ঠুঁটো জগন্নাথের মতো ;
       ওয়েক-আপ্ অ্যালার্ম গড়িমসি করবে প্রতিদিন ৷
       স্নুজিং টাইম বেড়ে চলবে আস্তে আস্তে ৷
       আসতে আসতে ভিড় বাড়বে আস্তে আস্তে নয় ৷
দুঃখ থাক্, হাসি থাক্ , চোখে জল থাক্ ,
থাক্-থাক্ করে সাজানো জল
অঝোর ধারায় পড়ে যায় –
ঠিক বৃষ্টি নয়
বরং পাগলের নাক ঝাড়ার মতো -
আমিও ঝাড়তে গিয়ে দেখি . . . আছে তো !


পেপারওয়েট স্থির , পেপার স্থির ,
লেখার আঙুলগুলো নড়বড়ে , লেখা
মুষ্ঠিগত হয়না , কেবলই লাফায় ,
পালায় পিংপং বলের মত –সামনে ,
পেছনে হাত দিয়ে ডাকি
শরীরে ঘূর্ণিঝড় , কেবলই বমিভাব ;
পেছনে হাত দিয়ে ডাকি
শরীরে প্রতীপ-ঘূর্ণবাত , তাই বমি-বমিভাব ;
       কলকাতা স্পিন করছে , কখনও অফ্ ,
       কখনও অন্ , সবসময় গো অ্যান্ড্ গন্ -
       তাই এসেছে দুসরা , অনেক ভেল্কি ;
       উল্কি আর রইলো না শরীরে , শরীর বিক্রি হয়েছে ৷
এখন তাই বুক দেখতে ভয় পাই ;
আঁকতে ভয় পাই ; শুধরোতে ভয় পাই ;
ভয় পাইনা ঐ রাস্তার ধারে মনীষাময়ী হতে
এবং তখনই চেঁচিয়ে বলি
আমর খাবার চাই , ভিক্ষা নয় ৷
আমার জল চাই , বৃষ্টি নয় ৷
আমার চাই , চাই-ই , ‘চাঁই’
শরীরে হাত দিয়ে দেখি . . . আছে আর নাই . . .

কলকাতা -জানালার বাইরে কত কথা (৪৬)

কলকাতা -জানালার বাইরে কত কথা
অঙ্কুর কুন্ডু
             
         জানালাটা চোখের মণির ওপর গরাদ দিয়েছে ,
         বিকেলের শেষ রোদে কলকাতা আরও একজোড়া
         চোখ পেয়েছে –বিকৃত ; কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা হবে . . .
         প্রসবযন্ত্রনার মতোই ছটফট করবে পিচের রাস্তা ও ট্রামলাইন !
                 কলকাতা শেষ কোন রাতে প্রসব করেছে !
                 শেষ কবে এই শহর শিশুর মতো খেলায় মেতেছে !
         রামদুলালের বিপরীতে মহিষের মোটা দুধ
         পাওয়া যায় . . . কলকাতা শহরে দুধ ও জলের বিতর্ক
         নেই ; প্রশ্ন একটাই –যে মহিষ দুধ দেয় ,
         সে কি মোটা ?

         এসপ্ল্যানেডের মোড়টা পেরিয়ে সেদিন দেখলাম
         রাস্তার এককোণে জল উপচে পড়ছে ; কলকাতা
         বৃষ্টি ভুলেছে বেশ কয়েকদিন . . .
         পৌরসভাও আগুন নেভাতে জল করেছে বেশ অনেকটা !
                 কলকাতা বিধবা নারীর মতোই লোভী নিরামিষাশী !
                 সে একবারই জ্বলতে চেয়েছিল সহমরণে !
         মাঝরাতের রাস্তা নিস্তব্ধ ; যেন কলকাতা পূর্বাভাস পেয়েছে –
         বিদ্রোহীরা বিশেষ বিশেষ জায়গায় কেরোসিন ঢেলেছে , তাই আজ
         ভোরর আগে একটিও হর্ন নেই ; প্রশ্নটা উঠেই এল ,
         উপচে আসা জল কি দীর্ঘদিনের পচা কেরোসিন ?

         রাত এলেই শহরটা যায় বদলে ; ফিরে আসে
         একাকীত্ব পাখিদের ঘরে ফেরার মতোই ৷
         আগামী সকাল কলকাতার ক’জন মানুষই বা দেখবে -
         যারা রইলো তারা . . .
                 কলকাতা শহরের ট্র্যাজেডি গলা কঁকিয়ে দেয় !
                 দেখি সুলগ্নাও হাঁটু মুড়ে মাথা নীচু রেখেছে !
         যে শহর অফিস-টাইমে অভিশাপ কুড়োয় -
         সেই শহরে শুনশান রাতে একটা গাড়ী ছুটে যায় ,
         ভোরের আলোয় দেখি ঠান্ডা বাতাসে খই উড়ে যায় ,

         এই কলকাতা কখনও আবার চোখ ভাসিয়ে দেয় !

আশ্রয় –শেষ সাশ্রয় (৪৫)

আশ্রয় –শেষ সাশ্রয়
অঙ্কুর কুন্ডু


               সকালে ঘুম ভাঙলেই কানে আসে ঐ বুড়ো ফেরিওয়ালার ডাক ৷ অত্যন্ত কর্কশ
               এবং সরস; অমুক চায় , তমুক চায় করে হাঁকে !
                         
                          জানালার মশারিতে আঙুল রেখে
                          খেলি ‘ইকির-মিকির-চাম-চিকির’
                                “খেলনা নখ চায় , এই একপিস্ মশারির দড়ি”
                          ‘চামের কাঁটা’
                          লোকটির আঙুলটা দেখতে ইচ্ছে করছিল ,
                          ওর আঙুলে কি মোটা চামড়া
                          সলগ্নার পায়ের কুলাটির মতোই ?
                                “খেলনা গন্ডার চায়”
                          ও অনার্যগোষ্ঠী !
              
               সকালে ঘুম ভাঙতেই কানে আসেনি ঐ বুড়ো ফেরিওয়ালার ডাক ৷ তার
               আগেই নীচে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওকে দেখার জন্য ! ও সন্তানহীন !
                              
                                “কিছু নিবেন ?”
                          (না –বলব ভেবেও বলিনি)
                          ‘হ্যাঁ , মশারির দড়ি কত ?’
                                “ও নাই , আজ মুখোশ এনেছি”
                          (কেন –জিজ্ঞাসা করিনি)
                          ‘গতকাল তো ছিল !’
                                “আজও আছে , বাড়ির মশারিতে”
                          গতকাল রাতে ডিভোর্স পেপার পেয়ে
                          মুখ দেখিনি আয়নায় ; মুখোশটা নিলাম কিনে !
              



               সকালে ঘুম ভেঙে শুনি এক ফেরিওয়ালার ডাক ৷ ও যে নয় , তা এই
               বসা স্বর শুনেই বুঝেছি ৷ নীচে গিয়ে দেখি সেই বুড়ো ৷
                         
                          ‘ঐ তো মশারির দড়ি
                          সুতো ওঠা , বেআব্রু শরীর কেন ?’
                                “বউয়ের গলা থেকে টানতে গিয়ে”
                          বউ তো আমার
                          ছিল
                          ‘তোমার বউ ভালো আছে ?’
                                “গত পরশু অনেকক্ষণ ঝুলে
                                কালো ও নীল . . . ভালো আছে ,
                                গতকাল বলিনি ছোঁয়া লাগে পাছে”

               সাশ্রয় টিকিয়ে দিল বুড়োটার শেষ অজানা আশ্রয় –বউ ও মুখোশ ৷
               ওর চেনা আশ্রয় কোমরে গোঁজা ! ডিভোর্স হল , পরের সকাল

               এল ; নীচে না নেমে ‘. . .মজুমদার . ধেয়ে এল. . .’ 

আমার চোখে নারী : আমার জন্মরাশি (৪৪)

আমার চোখে নারী : আমার জন্মরাশি
           অঙ্কুর কুন্ডু

ভোরের স্নিগ্ধ শীতল আলোয়
        একবিংশ শতক কালো
আজও পুরুষ-চোখে নারী
কেবলই কাড়াকাড়ি
        ‘হাতে তরবারি’
নারীর বিভাজন
          /
         জননী
         জায়া
সহবাসে থাকা পেটের শিশু বেড়ছে
          +
    ধর্ষিতা নারী
স্ফটিক বাবুর বাজার থলে বা প্রকাশের পকেটে
সর্বত্র দোদুল্যমান নারী ,
পার্কের প্রেম – অন্তত নিতম্বে একটু স্পর্শ !
অথচ
ঝাঁসির রাণীর যুদ্ধ ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ,
যদি হত আজকের জিভ-ঝোলা পুরুষের সাথে –
প্রকৃতই বলা যেত
‘খুব লাড়ি মারদানি,উয়ো তো ঝাঁসিওয়ালি রাণী থি’ !
আজ ৮ই মার্চ ; আন্তর্জাতিক বিশ্ব-নারী দিবস -
আজই কি নাড়ি-টেপা হবে লীন !
নাকি কোনো এক খালপাড়ে – ফোটোগ্রাফার
তুলবে উলঙ্গ নিথর দেহ যৌনতার প্রচ্ছদের জন্য !
নাকি আজই পৃথিবী বলবে,’কন্যাসন্তান হল
আগামী সময়ে আমার মা , আমারই জন্মরাশি’ !




অবসেসড্ –বাঙালীর অসুস্থতা (৪৩)

অবসেসড্বাঙালীর অসুস্থতা
অঙ্কুর কুন্ডু

    ট্যাক্সি ধরলাম অফিসের সামনে থেকে ৷ ক্লান্ত, তাই উঠেই সিটে শরীরটা এলিয়ে দিলাম ৷ অনেক রাত হয়ে গেল আজ ৷ হঠাৎ ড্রাইভারের সিটের পিছনে লেখা ট্যাক্সির নম্বরটা চোখে পড়তেই চমকে ঊঠলাম . . . ‘WB40M7010’ –খুব বেশিদিন হয়নি; এক মাসে টানা তিনবার এই একই ট্যাক্সিতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছি ট্রিপল্ জিরো’- ট্যাক্সি , মজা করে বৃদ্ধ ড্রাইভারটিকে এই নামেই ডাকতাম ড্রাইভারটির ব্যবহারে আমি এতটাইঅবসেসড্ছিলাম যে তাকে চিনতে ভুল করতেই পারিনা ৷  কিন্তু সবচেয়ে অবাক হলাম এটা দেখে যে ড্রাইভারের সিটে আগেকার সেই কালো বৃদ্ধটি নেই, এক পরিমার্জিত সুদর্শন যুবক কিন্তু সেই বৃদ্ধটি একদিন বলেছিল যে তার নিজের অসুস্থতার মুহূর্তেও সে এই ট্যাক্সিটি চালায়, কোনও অবস্থাতেই সে ট্যাক্সিটাকে হাতছাড়া করে না; তবে আজ কেন !!! অনেক সম্ভাবনা মনে আসতে শুরু করলোহতেই পারে তার কোনও আত্মীয়কে সে ট্যাক্সিটা চালাতে দিয়েছে , আবার এও হতে পারে যে আজ সে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ! মন মুখের সন্দিগ্ধ-চিহ্নগুলি মুছতে সাহায্য করলো ড্রাইভার-সিটের যুবকটি আমার প্রশ্নের উত্তরে সে বললো যে বৃদ্ধটির স্ত্রী নিউমোনিয়ার গভীর ঘোরে কাবু , তাকে বাঁচাতে গেলে দরকার অনেক টাকা তাই সেই বৃদ্ধটি ট্যাক্সি বেচে দিয়েছে আমি মনে মনে ভাবলাম, বৃদ্ধটি তো আমাকে বলেছিল যে নিজের অসুস্থতাতেও সে ট্যাক্সি চালাবে কিন্তু আজ যে তার স্ত্রী . . .

    সারাদিন ইন্টারনেটে নিউমেরোলজি নিয়ে গবেষণা করতে করতে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে ৷ হঠাৎ ট্যাক্সির নম্বরটি দেখে খেলা করতে ইচ্ছা হল, উল্টে-পাল্টে দেখলাম ‘M010704..’ ! আরে, এ তো আমার মেয়ে মিনির জন্ম-তারিখ, আজ পয়লা জুলাই,২০১৩ ৷ অতএব, মিনির জন্য গিফট্ কিনতে হবে ৷ ট্যাক্সি থেকে নেমে ট্যাক্সিটিকে এগিয়ে আনতে বলে দূরের একটি দোকান থেকে পুতুল কিনলাম ৷ ফোনটা বেজে উঠলো ৷ অর্জুনের ফোন , ও গোপালের মোবাইল নম্বরটা চাইছে ৷ প্রথম সাতটা ডিজিট ঠিকমতো শুনতে পেলেও , শেষ তিনটি ডিজিট নেটওয়ার্কের বদমায়েশিতে বারবার বলতে হচ্ছে ; চিৎকার করলাম ‘শূন্য শূন্য শূন্য’ ‘তিনটে শূন্য’ ‘ট্রিপল্ জিরো’ ৷ পাশ ফিরে দেখলাম যে সেই বৃদ্ধ ড্রাইভারটি হাসিমুখে রাস্তার মাঝ বরাবর হেঁটে আমার দিকে এগিয়ে আসছে . . . আর আসছে না ৷ তার আগেই আমাকে অনুসরণ করা আমার তথা বৃদ্ধটির ট্যাক্সি তারই দেহকে রক্তাক্ত ও নিথর করে দিল ৷ পুরোটাই দুর্ঘটনা ৷ তবে কি সেই বৃদ্ধটি আমার কোনো ক্রিয়া-কর্মের প্রতি ‘অবসেসড্’ ছিল !!! মিনির জন্মদিনের গিফট্ হাতে একটাই কথা মনে এলো : ‘আমার অসুস্থতায় ট্যাক্সি ছাড়বো না’৷

ক্লান্ত মুখ (৪২)


১লা বৈশাখ (৪১)

১লা বৈশাখ
অঙ্কুর কুন্ডু

বসন্ত বিদায় নেওয়ার আগেই গ্রীষ্ম ঢুকে পড়েছে ৷ এভাবে হঠাৎ বিদায় নেওয়াই হল অকাল প্রয়াণ ৷ বারো বছরের ঋজুর জীবনে সেরকম কিছুই ঘটেনি ; তাও রোদের তাপে বসে সামনের বাড়ির দিকে চেয়ে আছে ! আগামীকাল , পয়লা বৈশাখে ঋজুর বন্ধু সুকৃতি নতুন পোশাক পরে ঐ বাড়ি থেকেই বেরোবে ! ঋজু নিজের ঘরে ঢুকলো ৷ গত পরশুও ঋজু বকা খেয়েছিলো রোদে ঘোরার জন্য ৷ আজ মা বকবে না , মা-এর মন . . . মন খারাপ !


বাবা সংসার ত্যাগ করেছে ৷ সম্বল হল মামাবাড়ি ও মা-এর সেলাই মেশিন ৷ মেশিনেই এইবছর ঋজুকে তার মা নতুন জামা বানিয়ে দিয়েছে ! গতকাল সকালে মা-এর স্ট্রোক , তারপরই পঙ্গুত্ব ! মা আর কোনওদিনই বকবে না ৷ নতুন জামা সেলাই হবে না ৷ মানুষ মারা গেলে নিঃসঙ্গতা আসে ; কিন্তু বেঁচে থেকেও তাকে না পাওয়া . . . ঋজু তাই একলা ! এরপরের সব বৈশাখ তার ১লাই , সকলের মতো পয়লা নয় !

Sunday, 24 August 2014

সুনীল সাগরে - নোনাজল ছুঁয়ে আছে (৪০)


সুনীল সাগরে - নোনাজল ছুঁয়ে আছে
                 অঙ্কুর কুন্ডু

ফিরতি চোখ এখনও বলছে হেসে -
আজ শুভ জন্মদিন ! ফেরারী পলক
       ঝিকমিকিয়ে তাকে চায়ছে -
       যে কাদার মধ্যে জলছবি আঁকছে !
ঐ বিছানার চাদর আজও কুঁচকে , এখনও চেয়ার ফাঁকা ,
ফেরার দিনেও কোথায় যেন সে এপিটাফ লিখছে একা !

গত রাতে নীরা এসেছিল স্বপ্নে ,
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকা. . . সাথে এক জ্বলন্ত সিগারেট -
       ঠোঁট বুজে ছিনিয়ে নিল নীরাকে ,
       মদের তীব্র গন্ধ নীললোহিতের কলমে আটকে. . .
গোলাপের শুভেচ্ছা কাঁচা-পাকা চুলকে চামড়ায় অটুট রেখেছে ;
অথচ এক রজনীগন্ধার শুভ্র চাদর ক্রমশঃ পাপড়ি ঝাপটাচ্ছে !

আজ তবু ‘রেলব্রীজ একা’ !
পাথরের সাথে রেললাইনের সাক্ষাৎ ভুলে
       রেলগাড়ি চলেছে ফাঁকা ৷ পিছিয়ে পড়েছে স্মৃতি ,
       চলে গেছে সূর্য অস্তাচলে ৷
গভীর রাতে এলোমেলো নিস্তব্ধতা জড়িয়ে -
সিক্ত অভিনন্দন -বেদনার রিক্ততা এড়িয়ে !

       তুমিও কথা রাখোনি ; শেষ হয়েছিল আশি পাওয়ার সাধও !
       তাই , সুনীল সাগরে নোনাজল ছুঁয়ে আছে আজও !

? ? ? (৩৯)


বিবর্ণ স্বপ্নের হাতছানি (৩৮)


বিবর্ণ স্বপ্নের হাতছানি
      অঙ্কুর কুন্ডু

মানুষের ভিড়ে কত চেনা আগন্তুকের ভিড় ।
চেনা অথচ আগন্তুক !
স্বপ্নের খাঁচায় এরাই ছিল পোষ্য
এরাই ছিল আলাপচারিতার বন্ধু
এরাই বেঁধেছিল আমার স্বপ্নের মই
আমরা ভাসিয়েছিলাম ইচ্ছে-তরী
আলাপ-আলোচনার গভীর স্বচ্ছ সলিলে
তবে আজ সেই ‘আমরা’ শুধু ‘আমি’
গভীর স্বচ্ছ সলিলে বাসা বেঁধেছে
হাজার রঙের ঘোলাটে স্বপ্ন ।
যারা একসাথে আগে ছিল ,
আমার চক্ষু-শ্রাবণধারায় তারা বিদায় নিয়েছে ।
আমরা ছিলাম বিবর্ণ সাদা –
পরিষ্কার ,স্বচ্ছ ,অমলিন ভালোবাসায় পূর্ণ ।
আজও তারা সাদা ;কিন্তু
আমি রং মেশানো এক তুলি –
যার ছোঁয়ায় সকল রং নিজের গন্তব্য খুঁজে পায় ।
আর ,আমি একা হয়ে থাকি এক বাটি জীবনে ।
একাকীত্বের জীবনে যেন আমি একলা কাঁচঘরে
বিফল ডাক আজ যেন স্বপ্নবন্ধুর অগোচরে
হয়তো তারা দুঃখ পেয়েছে
হয়তো তারা সুদূর আকাশে কাঁদছে
আমার রঙিন লোভের প্রত্যক্ষে
তাও ,আমি চাই তারা কাঁদুক
যদি সেই শ্রাবণধারায় বিবর্ণ হতে পারি !
হয়তো তারা ক্ষুব্ধ আজকে –
তাই সূর্য রূপে কৃষ্ণচূড়ার ফাঁকে
জ্বলছে অগ্নিশর্মা হয়ে ।
তাও ,আমি চাই
সেই রাগের আগুন জ্বলুক ,
পুড়িয়ে শুদ্ধ করুক আমাকে ।
বাড়িয়ে দিক তাদের হাত ,তাদের দেহ ।
আমি আলিঙ্গন করতে চাই ।
আমরা আর আগন্তুক নই ।