Wednesday, 5 November 2014

অনুভবের নাম ছিল না (৫৬)


অনুভবের নাম ছিল না
অঙ্কুর কুণ্ডু

        ফুটপাথে থাকাকালীন অনুভবের কোনো নাম ছিল না ৷ এই বাড়ীতে এসে অনুভব খুঁজে পেয়েছে বাবা-মাকে ৷ নিঃসন্তান দম্পতিরা প্রায়শই অনাথ-আশ্রম থেকে বাচ্চা নেন ৷ মি.-মিসেস দত্ত দম্পতির অনুভূতির কথা ঠাহর করাই যায়নি ৷ রাস্তা থেকে আটবছরের ছেলেটাকে পরম যত্নে তুলে এনে নিজেদের সচ্ছ্বল পরিবারে জুড়ে দিলেন ৷ এই দম্পতিকে আর কেউই ‘আঁটকুড়ে’ বলে না ; অনুভবও আর অনাথ নয় ৷ কী দারুণ ভাগ্য !

        অনুভবের বাইরে যাওয়া বারণ , যদি ঘরের কেলেঙ্কারি. . . অনুভব যখন বাইরে ঘুরতে যায় তখন মা-বাবার মাঝে পরম আদরে ওনাদের হাত ধরেই থাকে ৷ রাস্তার ছেলে বলেই কী না জানা নেই , ওর গায়ে ঘা-ভর্তি ৷ আসলে ঘরের কাজ ঠিকমত না করলে তো মনিবরা কাজের লোকের ওপর রেগে থাকবেনই ৷ অনুভবের নতুন মা অনুভবকে একটু বসতে দেখলেই সারা গায়ে খুন্তির ছ্যাঁকা দিতে থাকেন ৷ রাস্তা থেকে ছেলে তুলে আনার এটাই একটা বড় সুবিধা ৷ অনুভবের যখন নাম ছিল না , তখন ও রাস্তার ছেলে ; এখন ওর নাম হয়েছে  , ও বড় হচ্ছে , তাই লোক. . . কাজের লোক !


মৃত্যু ঠোঁটে হাসিও আঁকে (৫৫)


মৃত্যু ঠোঁটে হাসিও আঁকে
অঙ্কুর কুণ্ডু

        গতকাল সকাবেলায় রাজু ‘মা , আসছি’ বলে সেই যে বেরোল , আর ফিরল না ৷ মারা গেছে রাজু ৷ যদিওবা ওর মা এখনও জানে যে ছেলে নিরুদ্দেশ ৷ আগামীকাল রাজুর বয়স হত বারো ৷ জন্মদিনের আগেই মৃত্যুর ঘটনা হামেশাই ঘটছে ৷ কিন্তু এইবারের জন্মদিনটা রাজুর কাছে আলাদাই হত ৷ কারণ তিনবছর বন্ধ থাকার পরে দুইমাস আগেই রাজুর মায়ের কর্মস্থল –পুতুল তৈরীর কারখানাটা খুলেছে ৷ ইচ্ছে ছিল এই জন্মদিনে ছেলেকে একটা জামা দেবে , সেইজন্য কিছু টাকা সরিয়েও রেখেছিল রাজুর মা ৷ কিন্তু তা আর হল কই… ইতিমধ্যেই সাদা চাদরে মুড়ে শোওয়া রাজু ঘরের সামনে চলে এল ৷

        রাজুর মা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ছেলের সামনে বসে পড়ল ৷ রাজু ট্রেনে কাটা পড়েছে ৷ হঠাৎই রাজুর মা হেসে উঠল , মাথা কাজ করছে না যে তা নয় ; আসলে যখনই রাজুকে ওর মা পড়তে বলত ও এইভাবেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকত ৷ রাজুর মা জানেও না যে তার জমানো জন্মদিনের টাকায় অজান্তেই রাজুর বাবা ফুল-কাঠ-চাদরের আয়োজন করেছে , এবার যে…


শ্রীরাধা কাছে ডাকলে… (৫৪)


   শ্রীরাধা কাছে ডাকলে…
অঙ্কুর কুণ্ডু


        শ্রীরাধা আমার থেকে মাত্র দুই বছরের বড় ৷ বয়স নিয়ে আমাদের কোনোদিনই অসুবিধা হয়নি ৷ ও জানে যে আমি ওর শরীরটাকে খুব ভালবাসি , তা বলে কখনও ও আমাকে পার্ভার্ট বলে গালিগালাজ করেনি ৷ শ্রীরাধা কথা বলতে পারে না , একটানা হেসে যেতে পারে , ইশারা করে আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য ৷ ওর সব ইশারাই আমি বুঝতে পারি , অন্য কেউ বুঝবে না , হয়তো ওর সাথে এতদিন আছি বলেই… ও মাঝে-মাঝেই চুপ করে আমার সূক্ষ্ম ও লম্বা আঙুলের ছোঁয়া পেতে চোখের সামনে নিজের খোলা পিঠ মেলে দেয় ! সকলের কাছে ওর খোলা পিঠ যৌনতার পাঁচিল মনে হলেও , আমার কাছে তা মৌনতার মিছিল !

        আমার যখন উনিশ , তখন শ্রীরাধাকে প্রথম দেখি ৷ শ্রীরাধা কাঁদলে আমার কষ্ট হবে , তাই কাঁদে না ৷ ও এতই শান্ত , কখনওই আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলে না ৷ আমার লেখা পড়ে শোনালে শ্রীরাধা সাদা চাদরের পিঠে পিঠ রেখে তা শোনে ৷ শ্রীরাধা কাছে ডাকলে , আমি আঙুল-জল-রং-তুলি নিয়ে সাদা ক্যানভাসে আঁকা ওর দেহের রং গাঢ় ও হালকা করে দিই !