Saturday, 25 April 2015

সাবলিমিটি –শেষ পথ (৬০)

সাবলিমিটি –শেষ পথ
অঙ্কুর কুণ্ডু

                                   সিঁড়ি বেয়ে ছায়া উঠে এলে -
                                            ঋতুপর্ণা দরজা খুলে দিত ,
                                   একরঙা ছায়া উঠোন ডিঙোলে -
                                            সিঁড়ির ওপর থাপ্পর পড়ত ৷
                                  
                                   শালের লোমে কানের দুল আটকে
                                   ঋতুপর্ণা চিল-চিৎকার জুড়লে, ওর ঠোঁট
                                   উড়ন্ত চিলের মতই টানটান হত৷ চিলের
                                   নখের মতই তীক্ষ্ণতায় ঋতুপর্ণা দেহে
                                   আঁক কাটলে ট্রামলাইনের খোপে জমে
                                   যাওয়া ধূলোরা বিদ্রোহ করে ওঠে, ওদের
                                   উড়ে যাওয়ার পথে ঋতুপর্ণার স্নিকার্স চুমু দিলে ,
                                   ওরা নিস্তেজ হয়ে একে অপরের পেটে ঢুকে যায় ৷

                                   বিগ্ বেনের শহরে তোমার নামে ব্যাঙ্ক্ খুলে
                                   গোছা-গোছা ড্রইং-বুক ঢোকানোর কথা ছিল !
                                   তোমার ঝরে পড়া চুলের মুঠোতে রং ভরে
                                   খেলনার ছলে ঝুলন্ত দাড়ি বানিয়েছিলাম ,
                                   সেই দাড়ির শেষভাগ বুকের কাছে থমকেছিল ৷
                                   ঐ বুকে তোমার চেয়ে থাকা, শুয়ে থাকা -সবই
                                   ছিল ভরা ঐ ড্রইংবুকে ৷ বাকী ছিল তোমার পিঠ
                                   ছুঁয়ে ক্যানভাসগুলো সিমা গ্যালারিতে তুলে দেওয়া…

                                   ঋতুপর্ণার খোলা দরজা দিয়ে -
                                            যারা ভেতরে আসছে ,
                                   তারা সকলেই ওর সন্তান , ঋতুপর্ণা মা ;
                                            এর বেশি আর এগোনো যায় না ৷
                                           

                                   

সঙ্কোচে আমার চোখেরা (৫৯)

সঙ্কোচে আমার চোখেরা
অঙ্কুর কুণ্ডু

       সর্বাণী আজ যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে , বিয়ের আগেও সেভাবেই তাকিয়ে থাকত ; চোখগুলো বেশ টানা-টানা , ঠিক দেবী দূর্গার মত. . . নয় , বরং সুন্দরী মহিলার মতই ৷ অফিস থেকে এসে দেখতাম , সর্বাণী শান্ত হাতে বাড়ির সকল কাজ করছে ৷ তারপর রাতের খাবার সেরে একই বিছানায় দু’জনে ঘুমাতাম ; আমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিল না ৷ স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের সংজ্ঞা কী. . . বিয়ের পরে ক’টা রাত লাগে , তা বুঝতে ! অথবা , কতগুলো বিকেলে পরস্পরের হাত ধরে হাঁটলে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী মনে হয় !


       বিয়ের প্রায় পর থেকেই বড় টেবিলটা সর্বাণীর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ৷ লাজুক সর্বাণী বরাবরই সেজে থাকতে ভালবাসে ৷ সর্বাণীর অতীতে সাজের সরঞ্জাম ও বর্তমানে সাজের সরঞ্জামের মধ্যে পার্থক্য আছে ৷ লাল শাড়ির মধ্যে কালো ফুল ও কালো পাড় এখনও আমার চোখে জল আনে ৷ বিয়ের আগে , ওকে ভালোবাসার আগে থেকেই জানতাম ক্যানসারগ্রস্ত সর্বাণী আর কয়েকদিন. . . তাও ওর ভালোবাসায় বিয়ে এবং বিয়ের দ্বিতীয় রাতেই ওর একার শয্যা ৷ ধূপের ধোঁয়ায় , ছবিতে সর্বাণীর চোখ এখনও টানা-টানা , আমার চোখেরাই শুধু বুজে আসছে !

সীতা , তুমিই সতী ! (৫৮)

সীতা , তুমিই সতী !
অঙ্কুর কুণ্ডু

সীতা , তুমি দেবীর বসন ছেড়ে নারী হও ; অথবা হতে পার নরমাংসের সতী ৷ সীতা , কেন আজও তোমায় দেখিনি –সকালে দু’হাত বাড়িয়ে হাই তুলছো কিংবা স্বামীকে ঠেলে ডাকছো ! দেখিনি তোমায় বই পড়তে , শুনতে পাইনি তোমার চা টানার আাওয়াজ ৷ বোধহয় তুমি লজ্জা পাও অথবা চাওনি যাতে পুরাণের পোশাক কখনও যায় ভোলা ! সীতা , তোমার পরিচয় কি ? তুমি তো নও আমাদেরই মহিলা !

                                 কেন হেঁটে যেতে ধীরে ধীরে
                                                নীচু মুখ
                                                দশরথ ডাকলে
                                 সুলগ্না বড়ই বেয়াদপ
                                                শ্বাশুড়ির ধমকে রা কাটে
                                                প্রথম চড়েই সুইসাইডের হুমকি
                                 থেমে যেত অত্যাচার –যা ছিল বাকী !

সীতা , তুমি কখনও কি বেরিয়েছিলে পঞ্চবটীর প্রাতঃভ্রমণে ! কেন পাখিরা তোমার কাছে চায়নি আশ্রয় ! তবে কি তখনও মায়ের কোমলতাকে ঢেকে রেখেছিল স্বামীর আকর্ষণ ! ডানায়-ডানায় কি খবর গিয়েছিল গাছের পাতায় , তাই বুঝি মর্মরধ্বনি তুলে ডালপালা শুকনো হয়েছিল , নিজেদের আহূতি দিয়েছিল তোমার চোখের আড়ালে যেতে চেয়ে ৷ সীতা , তোমায় দেখিনি পথের ধারে বাচ্চার সাথে , তবে সীতা , তোমার পরিচয় কি ? তুমি তো নও আমাদেরই মহিলা !

                                 রাজ্যের সন্তান ছেড়ে কিভাবে
                                                বনবাসে ছিলে
                                                সন্তান কি প্রতিশ্রুতির ভ্রূণ
                                 সুলগ্নাকে দেখেছি রাতে
                                                স্কুটি চালিয়ে ছুটত
                                                বাড়ির বারণ পেরিয়ে
                                 মুঠো মুঠো আদর দিত হেঁদুয়ার ফুটে !



সীতা , তুমি এত লোভী ! তুমি সীতা কম দামী মারীচের চেয়ে ! কেন ছুটিয়েছিলে রামকে আঁধারে ! কোথাও তোমার মনে দানা বেঁধেছিল স্বামীর বীরত্ব , তাই বুঝি লক্ষ্মণকে পীড়া দিয়েছিলে রামকে খোঁজার জন্য ! তুমি সীতা পূর্ণ নারী , আজও কি পূজিত এই সমাজে ? যে নারী গন্ডির মধ্যে থাকে , সে নারী সীতা , সতী নয় , দেবী , চলমান নয়  ! তবে সীতা , তোমার পরিচয় কি ? তুমি তো নও আমাদেরই মহিলা !

                                 তবু সীতা , তোমার জন্যই লঙ্কাকান্ড
                                                তোমার জন্যই রামায়ণ
                                                পড়েছে তোমার অনুরাগী
                                 সুলগ্না পুরুষের মুঠো থেকে
                                                দূরে রেখেছে নিজেকে
                                                নিজের উন্মুক্ত পথে
                                 আজও কোনো কাব্যই লিখতে পারেনি সে !