Sunday, 29 June 2014

জরুরী পো+STAR (১২)

আমি এখনও ব্লগটি পুরোপুরি সাজাতে পারিনি , তাই এটা প্রকাশও করিনি আপনাদের কাছে ৷ কিন্তু যেদিন ব্লগটি সম্বন্ধে আপনারা জানবেন , সেদিনের জন্য কিছু কথা :

এই ব্লগের প্রায় প্রতিটি লেখাই কোনও না কোনো Printed Magazine বা Web Magazine বা Digital Magazine-এ প্রকাশিত হয়েছে ৷ তাই লেখাগুলির 'Copyright'-জাতীয় কোনো বক্তব্য তুলে ধরলাম না ৷

ধন্যবাদ ৷

নাTALK : একটি স্যাডিস্টিক্ স্বাদ (১১)


নাTALK : একটি স্যাডিস্টিক্ স্বাদ
অঙ্কুর কুন্ডু

প্রথম অঙ্ক : প্রথম দৃশ্য

সাজানো-গোছানো একটা ঘর ৷ পল্লব সোফায় বসে , পাশেই তার সখের অ্যাকোয়ারিয়াম ৷ সারা ঘরের আলোর শক্তি ঐ বড়ো অ্যাকোয়ারিয়ামটার মধ্যে থাকা কখান ছোট্ট গৌরামির(মাছ) সমান ৷ বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে পল্লব অন্যমনস্ক হয়ে গৌরামিকে জল থেকে তুলছে ও জলে ফেলে দিচ্ছে . . . ঘরের খোলা দরজা দিয়ে আঁখি ঢুকে এল-

        আঁখি     : কী গো , দরজা খোলা , তুমি ওভাবে বসে ! বাকীরা কোথায় ?
        পল্লব    : (অন্যমনস্কভাবে) গৌরামি তো একাই ছিল , ওর সাথে . . . (সচেতনভাবে) ও তুই এসে পড়েছিস ! আয় , হ্যাঁ , কি যেন বলছিস ?
        আঁখি     : (কপাল কুঁচকে) কনীনিকা , ক্রন্দন , তারা , নয়ন , মণি –এরা আসেনি কেন এখনও ! আসবে বলেছিল তো ? আর মাত্র দুই সপ্তাহ , তার মধ্যেই তো নাটকটি নামাতে হবে , প্রোডাকশনের কাজ কতদূর ?
        পল্লব   : চলছে ৷ চা খাবি ?
        আঁখি     : (বিরক্তির সুরে) শেষের দিকে এসে তোমার এই গা-ছাড়া ভাবটা নেওয়া যায় না !
        পল্লব    : অতি শক্তিশালী মহিলাদের ছাড়া শেষের দিকটা কখনও কি আঁটোসাঁটো হয় ? শেষ তো আসেই একটা . . . (দীর্ঘশ্বাস)
        আঁখি     : দু’বছর তো . . .
        পল্লব    : (আঁখির কথা শেষ হতে না দিয়েই) দু’বছর তো খুব কম সময় একটা মানুষকে ভুলে যাওয়ার জন্য ৷
        আঁখি     : তুমি তাহলে এভাবেই নিজেকে ভাঙতে শুরু করলে ? যদি এরকমই ইচ্ছা ছিল , তবে ছ’সাত মাস আগে আমাদের এই দলে নাম লেখাতে এসেছিলে কেন ? (রাগতস্বরে) এইভাবে চললে তো দর্শন নাট্যদল একদিন উঠে যাবে !
        পল্লব    : (ইয়ার্কির ছলে) সবাই তো উঠতেই চায় , তুই চাস্ না ?

আঁখির চোয়াল ক্ষীণভাবে শক্ত হয়ে উঠল ৷ পাশের ঘরে ঢুকে ও নিজেই নিজের স্ক্রিপ্টটা বলতে শুরু করল , এই ঘরে পল্লব একাই নিজের মনে আওড়াতে শুরু করল ওর ভুলতে না পারা ভুলগুলো ৷


দ্বিতীয় দৃশ্য

ক্রন্দন ও নয়ন বাসস্টপে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ৷ মুষলধারে বৃষ্টির ফোঁটার সংখ্যা এত বেড়েছে যে অসমানানুপাতে বাসের সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে ৷ দেরী হওয়ায় ক্রন্দন বিরক্ত আছে , তার সঙ্গে ন্যাকা নয়নের বকবক ৷ আসলে নয়ন আঙ্গিকগত পুরুষ হলেও ওর অঙ্গি-ভঙ্গি একজন মহিলার মতোই –

        নয়ন     : দ্যাখ্ তো , দুপুর থেকে টাচ্ দিতে বসলাম আর বিকেলে এই অনামুখো বৃষ্টিটা আমার মেক্-আপে স্ক্র্যাচ্ করে দিল ৷
        ক্রন্দন   : বিরক্তিকর !
        নয়ন     : আমাকে দেখলেই তুই ভ্রু কুঁচকাস্ কেন ? আমি কি অচ্ছুত ?
        ক্রন্দন   : বাড়িতে তো মেক-আপের আয়নাটা আছে , তার সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা জিজ্ঞাসা করিস ৷ জন্মেছিস কেন , সেটাই ভাবি . . .
        নয়ন     : এই চিন্তাটা করে তোর লাভ নেই ; বৃষ্টি পড়ছে তো ! এরপর তুই মাথা ঘামালেও তা বোঝা যাবে না ৷
        ক্রন্দন   : একটা ছেলে হয়ে তুই . . .
        নয়ন     : একটা ছেলে হয়ে ব্যাক পকেটে চিরুনি নিয়ে ঘুরিস কেন ?
        ক্রন্দন   : মানে ?
        নয়ন     : না , মানে বলছি , তোর অহংকারটা কোথায় ? তুই ‘Gender’-এর পাশে ‘Male’ লিখিস , তাই ? নাকি তোকে ছেলেদের মত দেখতে বলে এত অহংকার ?
        ক্রন্দন   : দুটোই আমার অহংকার , কেন ?
        নয়ন     : তাহলে তোর এই ‘অহং’-কে একটা Car ভাড়া করে পাঠিয়ে দে ;ওটা ছাড়াও ক্রন্দন থাকবে ৷
        ক্রন্দন   : একবিংশ শতাব্দীতে আত্মপক্ষ সমর্থনের উপায় হল জ্ঞান দেওয়া ৷
        নয়ন     : লৌহপুরুষ কাকে বলে জানিস ?
        ক্রন্দন   : (বিরক্তি ও অবজ্ঞার স্বরে) কাকে ?
        নয়ন     : Fe-male-কে ৷

ক্রন্দন অবাক ও হতভম্ব ৷ নিজেকে সামলানোর দরকার ছিল , নতুবা বৃষ্টিতে হারিয়ে যেত –

        ক্রন্দন   : স্ক্রিপ্ট রেডি ?
        নয়ন     : হ্যাঁ , বৃষ্টিটা ধরেছে , চল্ এগোই ৷


তৃতীয় দৃশ্য

কনীনিকা , তারা ও মণি ইতিমধ্যেই পল্লবের বাড়ি এসেছে ৷ ওদের Gossip এখনও চলছে ৷ আঁখি ওদের দেখেই চেঁচাতে শুরু করলো –

        আঁখি     : বৃষ্টিটা নামার আগেও তো আসতে পারতিস ?
        মণি      : তাহলে বৃষ্টিটা তো আমাদের ধরে রাখতে পারত না , বেচারা (তারার বিকট হাসি) ৷
        কনীনিকা : তা নয় তো , আবার কি ! বৃষ্টি বলে কি ওর কোনো সম্মান নেই ! হতভাগীটা মাঝে মাঝে আসে , ওর প্রতি তো একটু কনসার্নড্ হতে পারিস !
        আঁখি     : Gossip ছাড়া তোদের কোনো কাজ আছে ?
        তারা     : (আঁখির গাল দুটি টিপে) সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে, মিস্ রাগিণী ৷
        আঁখি     : মানে ?
        তারা     : মানে , চা হয়েছে ? কারণ Gossip ছাড়া আমরা ‘Go&Sip’ ভালোবাসি ৷

কনীনিকা , তারা ও মণি –তিনজনেই হাসিতে ফেটে পড়ল ৷

        কনীনিকা : আচ্ছা , ঠিক আছে ৷ পল্লব দা কোথায় ?
        আঁখি     : ভিতরের ঘরে ; তোরা কি শুরু করবি এবার ?
        মণি      : ছিঃ ! সবাই মিলে ? লজ্জা করে না !

আঁখি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল , ওকে থামিয়েই কনীনিকা বলল-

        কনীনিকা : আমার স্ক্রিপ্টের এই জায়গাটা আনতে পারছি না ৷ হঠাৎ এই সেন্টিমেন্টের জায়গা থেকে হাসিটা আনব কি করে !
        আঁখি     : কেন ! সারাজীবন তো হাসি-ঠাট্টাই করে গেলি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৷ এখন তাহলে হাসি ফুটছে না কেন ?
        কনীনিকা : সেই তো ! হাসি ফুটাতে গিয়ে ফাটছে . . .
        আঁখি     : কি ? কি বলছিস ? লজ্জা করে না ?
        কনীনিকা : না , মানে ফাটছে মানে , ফাটছে , মাথা . . . মাথা ফুটছে থুড়ি ফাটছে , মাথা ফেটে যাচ্ছে অসহ্য যন্ত্রনায় ৷

এরপর আঁখি ছাড়া তিনজনেই নিজেদের স্ক্রিপ্ট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠল ৷ আঁখি গেল পল্লবের ঘরে ৷ এখনও সবাই আসেনি ! পল্লবের কাছে ওর জীবনের কথাগুলো এখনও পুরোটা শোনা হয়নি আঁখির , আজ হয়তো কিছুটা শোনা যাবে ! আঁখিকে দেখেই পল্লব আঁচ করেছিল , চেয়ারটা টেনে দিল ওকে ৷

দ্বিতীয় অঙ্ক : প্রথম দৃশ্য

          পল্লব    : ২০১০-এর গোড়ার কথা , তখন আমি বিদ্যাসাগর কলেজের দিবাবিভাগে পার্ট-টাইমার হিসাবে পড়াতে ঢুকেছি ৷ ব্যবসা করার মত টাকা ছিল না পকেটে , বাবাও বলে দিলেন যে ব্যবসার পিছনে টাকা ঢালার মত পুঁজি তাঁর নেই ৷ তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে দ্রুতই মার্কশীটের সদ্ব্যবহার করে ঢুকলাম কলেজ চত্বরে ৷
        আঁখি     : তুমি তো মেধাবী ছাত্র , তাহলে শিক্ষকতায় অরাজি কেন ?
        পল্লব    : অরাজি ঠিক না ৷ একবার ভেবেছিলাম ব্যবসা করব , আবার ভাবি , নাহ্ ! ঝুঁকিহীন কাজই ভালো ৷ এভাবে এগোতে-পিছোতে গিয়ে দেখি জুতোটাই হারিয়ে গেল , অগত্যা . . .

গৌরামিকে নিয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎই ও মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল ৷ আঁখি এতক্ষণে দেখতে পেয়ে ওকে অ্যাকোয়ারিয়ামে রাখলো ৷

        আঁখি     : তারপর ?
        পল্লব    : কলেজের তৃতীয় দিনে একটা কাজে গড়িয়ায় গিয়েছিলাম , দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের কাছেই৷ অটোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি , দেখি কলেজের সামনে চার-পাঁচজনের জটলা , ভিড় ঠেলে দেখলাম এক ভদ্রমহিলা রাস্তায় পড়ে !
        আঁখি     : সুলগ্না বৌদি ?
        পল্লব    : না ৷ একজন সুন্দরী এবং মানসিক ভারাম্যহীনা ৷ ওনাকে এক যুবতী সাহায্য করছিলেন ৷ তারপর সে ধীরে ধীরে জটলা ছেড়ে বেরিয়ে গেল ৷

দ্বিতীয় দৃশ্য

        পল্লব    : সুলগ্না , সু . . .
        সুলগ্না    : কে ? আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না ! আমার নাম জানলেন কি করে ?
        পল্লব    : না , আসলে ঐ আপনার বান্ধবী এই নামেই তো আপনাকে ডেকে . . .
        সুলগ্না    : কি ? তার মানে আপনি আমাকে ফলো করছেন ? কি সাহস ! ডাকবো রাস্তার লোকজনদের ?
        পল্লব    : আপনি আমার কথাটা একবার শুনুন ৷
        সুলগ্না    : কি শুনবো ? অজুহাত ?
        পল্লব    : না ৷ আপনাকে আমি . . . আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি ৷ (মাথা নীচু করে)  আপনাকে আমার ভালো লাগে ৷
        সুলগ্না    : অনেকদিন মানে ?
        পল্লব    : আপনি তো প্রতি শুক্রবার কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় ঘোরাঘুরি করেন !

সুলগ্না কিছু বলতে যাবে , তাকে থামিয়েই –

        পল্লব    : ঠিক আছে , আপনি সময় নিন ৷ আমি আপনাকে ফোন নম্বরটা দিয়ে গেলাম

(একপ্রকার জোর করে পল্লব সুলগ্নার ব্যাগে একটি চিরকুট গুঁজে দিয়ে দৌড়ে পালালো) ৷

তৃতীয় দৃশ্য

শুক্রবারের এক দুপুরে কলেজ স্ট্রিটের ‘কথা ও কাহিনী’ বই-এর দোকানে সুলগ্না বই উল্টে-পাল্টে দেখছে –

        পল্লব    : এক মাস হতে চললো , কি ভাবলেন ?
        সুলগ্না    : (চমকে ঘাড় ঘুরিয়ে) আপনি কেন এরকম করছেন ?
        পল্লব    : আচ্ছা দু’জনে বসে তো চা খাওয়া যায় ?
        সুলগ্না    : ধরে নিন , চা খেতে গেলাম ৷ তারপর , আপনার প্রস্তাবে রাজিও হলাম সেই জায়গায় বসে যে জায়গাটা আট মিনিট আগেও আমার কাছে অজানা ছিল ৷ পাঠকরা কি নাটকটা মেনে নেবে ? কোথাও তো ওদের ছন্দ কাটবে ! ওদের তো মনে হতেই পারে যে কী করে আমি এত তাড়াতাড়ি এইরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম ! (হাঁটতে শুরু করে) আসুন ৷

সুলগ্না ও পল্লব কফি হাউসের দিকে এগোতে লাগলো ৷

চতুর্থ দৃশ্য

পল্লব ও সুলগ্না পরস্পরকে নিজেদের সম্বন্ধে জানাতে জানাতে কফি হাউস অতিক্রম করে , বিধান সরণীর দিকে এগিয়ে বিদ্যাসাগর কলেজের গলির মুখের বিপরীত প্রান্তের একটি চা-এর স্টলের বেঞ্চে বসলো এবং সুলগ্না নয় , পল্লব নয় , দু’জনেই মাটির ভাঁড়ে চা-এর অর্ডার দিল ৷

        পল্লব    : তাহলে পুরো ঘটনাটা আপনার কাছে দুই মলাটের মধ্যে থাকা নাটক মনে হচ্ছ ?

দুজনেই চা-এর ভাঁড় হাতে নিল ৷

        সুলগ্না    : হ্যাঁ ৷ (একটু থেমে) এতটা হেঁটে আসা বা এখানে চা খাওয়াটা বাদে ৷
        পল্লব    : আমি আপনাকে ভালোবাসি ৷
        সুলগ্না    : প্রায় একমাস হয়ে গেল , এগোতে পারেননি ?
        পল্লব    : আপনাকে বিয়ে করতে চাই ৷
        সুলগ্না    : তরপর ?
        পল্লব    : ভালোবাসা হওয়ার পরে বিয়ের কথা বলেছি ৷ বিয়ের পরর কথা বিয়ের পরে . . .
        সুলগ্না    : আপনার ট্রেন আছে এখন ?

ওদের পাশে , রাস্তায় , একটা ট্রাম যাচ্ছে ৷

        পল্লব    : তাড়াতাড়ি তো থাকবেই ৷ নাহলে দেখবেন বয়স বাড়ছে এবং ‘কবে যেন তারপর শ্মশান চিতায় তার হাড় ঝরে গেছে’ !
        সুলগ্না    : ট্রাম দেখে মনে পড়লো ?
        পল্লব    : খুব বেশিদূর যেতে হবে না ৷
        সুলগ্না    : কিন্তু পাঠকরা . . .
        পল্লব    : ওরা ধরে নেবে যে নাট্যকার ‘ইউনিটি অব্ টাইম্’-কে ‘কম প্রমিস্ (Com Promise)’ করে , তার সাথে কম্প্রোমাইজ্ (Compromise) করেছে !

এরপর দু’জনেই আনমনে ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফেরে , এবং কিছুদিন পরে তারা বিয়ে করে নেয় ৷

তৃতীয় অঙ্ক : প্রথম দৃশ্য

        পল্লব    : দুই বাড়িতেই এই বিয়ে মানা হয়নি ৷ যথারীতি আলাদা জায়গায় বসবাস . . .
        আাঁখি    : এরপর থ্রিল এল ?
        পল্লব    : হ্যাঁ , আমাদের একমাত্র ছেলে থ্রিল , ওটা ওর ডাকনাম ৷ সুলগ্না ও পল্লব-এর থেকে তিনটি ‘ল’ ধার নিয়ে নামটি রেখেছিলাম ৷

এরপর দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে ৷



দ্বিতীয় দৃশ্য

আঁখি ও পল্লব-কে ছাড়া সকলে পাশের ঘরে স্ক্রিপ্ট সামনে রেখে , নিজেদের মধ্যে আড্ডা মারছে ৷

        কনীনিকা : গতকাল চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম ৷
        তারা     : হ্যাঁ , তো ?
        কনীনিকা : যেখানে ঐ সিংহটা থাকে , মানে . ঐ ঝোপেরটা নয় কিন্তু ৷
        ক্রন্দন   : লোহার গরাদের ভেতরেরটা তো ?
        কনীনিকা : হ্যাঁ , ওটাই ৷ আমি সিংহটাকে দেখে পিছনে ফিরে দেখি যে একজন বেঁটে লোক আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখে চেয়ে আছে , এবং ওর গা থেকে একটা অপূর্ব মাদকতার সৌরভ আমাকে আঁকড়ে ধরছিলো ৷
        ক্রন্দন   : অ্যাঁ . . .
        কনীনিকা : হ্যাঁ , যদিও আমার মাথা ধরে গিয়েছিলো ঐ গন্ধে , কারণ মদের গন্ধ আমার সহ্য হয় না ৷ লোকটি বেদম টেনেছিলো , কত পাঁইট কে জানে ! তার উপর বকে বকে আমার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিলো ৷ উফ্ ! কী বিকট অভিজ্ঞতা !

তৃতীয় দৃশ্য

        বেঁটে লোক  : উরিব্বাস্ , এ তো খাঁচার বাইরে এসে গেছে ৷
        কনীনিকা    : কি ?
        বেঁটে লোক  : মা আমার , তুমি কি আমাকে আঁচড়ে দেবে ?
        কনীনিকা    : হ্যাঁ , আঁচড়ে দিতেও পারি , আবার কামড়েও . . .

বেঁটে লোকটি পকেট থেকে একট ছোট্ট , ছোট্ এবং আরও ছোট্ট , মরচে ধরা ছুরি বের করে –

        বেঁটে লোক  : এটা দিয়ে তোমাকে আটকানো যাবে ?

কনীনিকা দেখলো যে এ তো বেগতিক ! হঠকারিতা করলে তার একটু হলেও ক্ষতি হবে ৷

        কনীনিকা    : (শান্ত স্বরে) আপনি একা এসেছেন ?
        বেঁটে লোক  : না , বাবা ও মা-এর সাথে এসেছি চুসতে চুসতে . . . লজেন্স ৷
        কনীনিকা    : আহ্ , আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন ?
        বেঁটে লোক  : আমি কাঁপছি ?
        কনীনিকা    : কেন ?
        বেঁটে লোক  : তোমার মনে হচ্ছে যে আমি তোমাকে মারবো ?
        কনীনিকা    : না ৷
        বেঁটে লোক  : আমার চোখগুলো কি লাল হয়েছে ?

কনীনিকা দেখতে পাচ্ছে যে চোখ দু’টি লাল ৷ তাও নিজেকে ভালো প্রমাণ করবে ভেবে –

        কনীনিকা    : না ৷
        বেঁটে লোক  : (মারাত্মক রেগে গিয়ে) কি ? লাল হয়নি ? এ নিয়ে আমার দুটো বোতল শেষ , আর তুমি ফাজলামি করছো ?
        কনীনিকা    : (কাঁচুমাঁচু হয়ে) আমি তো এমনি . . .
        বেঁটে লোক  : হে হে , সিংহী মামি তো দেখছি সলিড ভয় পেয়েছে ৷
        কনীনিকা    : (একান্তে) আমি তো জানতাম যে মদ খেলে মানুষের অনেক কিছু হয় ৷ কিন্তু , তা বলে মানুষের সাথে জন্তুর পার্থক্য বোঝা যায় না ! বাব্বা , মহাদেবের কী মহিমা !
        বেঁটে লোক  : কিছু বললে ?
        কনীনিকা    : (নীচু স্বরে) হ্যাঁ , আপনার মাংস খেতে চাই ৷ ইডিয়ট্ !
        বেঁটে লোক  : তুমি তো পাগলও ! নিজের সাথেই কথা বলছো ! কোনোদিন বুঝি নিজের সাথে কথা বলোনি ?
       
চতুর্থ দৃশ্য

        মণি      : তারপর ?
        কনীনিকা : বাবা আমাকে দেখতে পেয়ে যেই কাছে এলো , লোকটি পালালো ৷
        ক্রন্দন   : লোকটির শেষ প্রশ্নের উত্তর দিলি না ?
        কনীনিকা : কী উত্তর দেবো ! নিজের সাথে নিজে কখন কথা বলবো ? আর বলে কী হবে !
       
সবাই ভাবুক হয়ে আবার স্ক্রিপ্টে নজর দিল ৷

পঞ্চম দৃশ্য

নিস্তব্ধতা ভাঙলো আঁখি –

        আঁখি     : থ্রিল চলে গেল কীভাবে ?
        পল্লব    : (অ্যাকোয়ারিয়ামের দিকে আঙুল রেখে) যেভাবে গৌরামি চলে গেল ৷
        আঁখি     : (চমকে) এ বাবা ! গৌরামি , গৌরামি কী করে . . . ইস্ . . . এক্ষুণি তো . . .
        পল্লব    : তুই গৌরামিকে তুলে যখন জলে দিলি , তার আগেই ও মার গিয়েছিলো , নীচে ৷
        আঁখি     : তখন তো কিছু বলোনি ?
        পল্লব    : সব মৃত্যুই তো মানুষকে থমকে দেয় , একটু হলেও ৷ প্রথমে সুলগ্না , তারপর থ্রিল , তারপর গৌরামি , আর তারপর আমি !
        আঁখি     : এসব কী বলছো ?
        পল্লব    : (হেসে) জীবনটা তো দুই মলাটের মধ্যে থাকা নাটক , বলা যায়না ৷ নাট্যকার হয়তো পরের দৃশ্য থেকেই এক-একটা চরিত্রের হৃৎস্পন্দন বন্ধ করে দিলো ৷ চল্ . . .

ওরা পাশের ঘরে গেল ৷

ষষ্ঠ দৃশ্য

আাঁখি হাততালি দিয়ে সকলকে একজায়গায় আসতে বললো –

        আাঁখি    : যে যার পজিশন্ নে ৷

চতুর্থ অঙ্ক : প্রথম দৃশ্য

বেল বাজলো ৷ দরজা খুললো সাঁচী ৷

        সাঁচী     : চরিত্রের আঁখি নামেই রিহার্সাল দিলাম ৷ নয়ন ও কনীনিকার মেক-আপ পাল্টে যথাক্রমে বেঁটে লোক ও সুলগ্না করা হল ৷ কথাদি , অবাক করেছে তোমার লেখা প্রথম স্ক্রিপ্টটা ৷ তোমার লেখা দেখে বোঝা যাবে না যে তুমি কথা বলতে পারোনা ৷ অনেক কথা বললে , অনেক কথা বাকী . . .

কথার ঠোঁটে হাসি , ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দু’বার ‘আবা . . আ . .’ আওয়াজ করলো ৷