Thursday, 24 July 2014

ভোরের শেষ আলোছায়া (২৬)


ভোরের শেষ আলোছায়া
            অঙ্কুর কুন্ডু


 যে ভোরের আলোমাখা ছায়া আমি ভুলেছি
            সে আর দিনের আগে আসবে না ৷

বাক্-বিতন্ডার আঁধার যখন কাটলো
ভোরবেলায় শুধু সেই গোয়ালা উঠলো জেগে
            শুধু সেই গোয়াল রইলো শুয়ে
            বিদ্ববল্লভ মহাশয় আজও ফেরেননি পুঁথি নিয়ে ৷

অশিক্ষিত গাভী স্রোতের মত ভাসিয়ে দিচ্ছে
বাছুরের অধিকার –বাছুরের জন্য ;
গোয়ালার শেষ টান –শেষ ফোঁটার রেশে
            যদি মানুষ হতো গাভী ,
            কদাচিৎ কাঁপতো গোয়ালা ৷ যদি মানুষ শুনতো
            ‘হাম্বা’ –অবলা নামে ঘুচতো ছেলেখেলা ৷

আমার কিছু মুখ মনে পড়ে আজ –
শহর ছাপিয়ে জানালা খুলেছিলো যারা ,
তারা কি ভোরবেলায় মুখ ধুয়েছে !
নাকি , ট্যাঙ্কির জল শেষ হওয়ার ভয়ে
মুখে কুলকুচি জমিয়ে রেখেছে !
কুলকুচি মুখে পর্দা টেনেছে ৷
ভোরের আলোমাখা ছায়া যদি একবার ভুলি . . .

থালার একপাশে কাঁটা রেখে
শুধু চেয়ে থেকে মোটা চালের ভাত
আরও মোটা হবে , পেট ভরবে
            -এই ভেবে যদি পিঠে চেটা পেট
            খুশি হয় , তবে আগামী ধান আর ফলবে না !
            ফলন কমবে না , দুই-চার হাত কমে যাবে ৷

শহুরে রাস্তার কোথাও নাম নেই তাঁর , আর
গ্রাম্য মেঠোর গন্ধ তথৈবচঃ
            তাই বিদ্ববল্লভ মহাশয় রাতেই ফেরারী হয়েছেন
            পুঁথি নিয়ে –কোনও এই মলাট , ওই মলাটের মাঝে ৷

যে ভোরের আলোমাখা ছায়া আমি ভুলেছি
            সেও আর দিনের আগে আসবে না ৷




Tuesday, 22 July 2014

ল্যাবরেটরী –তালাবন্দী নিঃসঙ্গতা (২৫)


ল্যাবরেটরী  তালাবন্দী নিঃসঙ্গতা
             অঙ্কুর কুন্ডু

এক কোণে পড়ে ফুল-আঁকা স্কার্ফ –
          কোনো দামী সুগন্ধির আশ্চর্য ভালোবাসা
আঁকড়ে ধরছে ক্ষারের বোতলগুলিকে ,
বেঁধে রেখেছে বেসিনের গায়ে থাকা তীব্র অ্যাসিড্ ৷
আজ শনিবারের পড়ন্ত বিকেলে
          এসেছিলো মেয়েটি সবার সাথে , সবার মতো
লাল-পাড় সাদা শাড়ির মাঝে সাদা ব্লাউজ –
ঢেকে দিয়েছে টুকরো সোনার মতো চিকচিকে লোম ৷
এই বোধহয় শেষবার নাম শুনলাম –‘সুলগ্না’ ৷
আজ শনিবারের পড়ন্ত বিকেলে
ওর টুয়েলভ্ ক্লাস্ : ক’দিন পরেই হবে স্কুল পাশ ৷

গত দু’বছর ওর আসা আমার ঘরে ,
ক্লান্ত চুলের গোছা ওর ফর্সা পিঠ ছুঁয়ে
ঝাপটা মারে উন্মত্ত বুকে –
          যেন কোনো নির্জন পৃথিবীর ওপর শুয়ে
          এক মনীষা যন্ত্রনার কামড়ে
          ছটফট করছে ৷ চায়ছে সেই পুরুষের হাতে
          ইতিহাসের পাতায় শুয়ে সমস্ত লেখায়
          শুধু ঠোঁটের ছাপ রেখে দেবে !
সিক্ত ভ্রু-যুগলের নিচে চোখের দু’পাশে সরু কাজল –
          যেন কোনো মুমূর্ষু শেষবার চোখ মেলে
          লঞ্চে ভেসে আসতে চায়ছে ৷
          সুলগ্নার সেই চোখ আজও চার দেওয়ালে
          ঘুরছে কোনও টেস্ট-টিউবের অপর প্রান্তে . . . .

আজ শেষ নিঃসঙ্গতা কাটানোর দিনে –
ওর স্কার্ফ ভুলে যাওয়া ,
ওর শেষ ফিরে চাওয়া . . . . .
আমার আগামী সারাবেলা
জানালার পানে চেয়ে শুধু মিছে কথা বলা ৷
আমি এক নিষ্প্রাণ ঘর ৷ আক্ষেপ একটাই –
রাতে তালাবন্দী আমি –সেই
সুলগ্নার থেকে দূরে ৷
শেষ শনিবারের পড়ন্ত বিকেলে –
          অ্যাসিড্-টেস্টের রং তোমার ব্লাউজে –রেখে দিও !



এখনও বাকি আছে (২৪)


এখনও বাকি আছে
        অঙ্কুর কুন্ডু

আমার অনেক পথ হাঁটা বাকি
জীবন তোমার সাথে
                    মৃত্যু তোমার সাথে
       জীবন-মৃত্যু তোমার সাথে
কিছুটা এগিয়েছি এপাড়
কিছুটা পিছিয়েছি ওপাড়
এখনও বাকি আছে –বাকি পথ হাঁটা

       তোমাদের সাথে যাত্রা শুরু
       তোমাদের মতো কাটানো দিন-রাত
       তোমাদের মতো করে পাল্টাত
       আমিও পাল্টাতাম আমার মত ১৮০ডিগ্রী-তে
       কখনও এক ফালি রোদ ,কখনও কবিতা
       এখনও আমি দর্শক তোমাদের শূন্যতার
আমার অনেক পথ হাঁটা বাকি
জীবন তোমার সাথে
                    মৃত্যু তোমার সাথে
       জীবন-মৃত্যু তোমার সাথে

       এখনও করছি অঙ্গভঙ্গি
       এখনও বেঁকে চলেছি কৃমির মতো
       তোমাদের মতো
       তোমাদের পা-এর মাটি খুঁজছি
       কবর খুঁড়ছি
       তোমাদের ,তোমাদের –ঐ তিন টাকার
       তাপ্পি মারা পকেটে তোমাদের খুঁজছি
কিছুটা এগিয়েছি এপাড়
কিছুটা পিছিয়েছি ওপাড়
এখনও বাকি আছে –বাকি পথ হাঁটা

সমাধির পা-এর নীচে ফাটল
হাত ঢুকিয়ে শুকনো খটখট
ঝড়ের বেগে আছাড় মারবে
বাবুঘাটের পিন্ডি-দানে ,আর
খুলিগুলোর নাম হবে ব্রেন
শুকিয়ে যাওয়া আমসি স্বাদে
যেটুকু জল ছিল –শুষিয়ে নেবে রোদে ;তাই
জীবন তোমার সাথে
                    মৃত্যু তোমার সাথে
       জীবন-মৃত্যু তোমার সাথে
এখনও বাকি আছে –বাকি পথ হাঁটা . . . . .


অপরাহ্নেই মৃত্যু চেয়েছি (২৩)


অপরাহ্নেই মৃত্যু চেয়েছি
অঙ্কুর কুন্ডু


                              
                               বাড়ি থেকে বেরিয়ে
                                                ডানদিকে
                      বাঁদিকে
                      বাঁদিকে
                      বাঁদিকে
                      বাঁদিকে
                               আমার বাড়িতে ফিরে আসা যায় ; শূন্য হাতে গেলে
                               সাথে নিয়ে আসা যায় কিছু ধুলো জুতোর তলে ৷
                               অকস্মাৎ আঙুল কাঁপিয়ে ছক কষে দেখি
                               প্রতিফলিত স্মৃতি সরণের ঘরে বরাদ্দ করেছে ‘ফাঁকি’ ৷

                              
                               বিকেল আসতেই দেখি পিছনে পড়ে আছে
                        দুপুর
                               এবং সামনে সেই
                                                জ্বলন্ত সন্ধ্যা
                               ইউরোপের আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলছে , এবং
                               কাঁচের শার্সিতে মাথা হেলিয়ে আমি গুনছি
                               রাতের . . . এখন বিকেল . . .
                               অসহিষ্ণু রোদ মুখে পড়ছে ,
                               মুখে পুড়ছে শেষ চুল্লীর স্মৃতি , মাথা ঘোরার আগে
                               কফির কাপে আলগা ঠোঁট রক্তের ছাপের মতো শুকিয়েছে ৷

                              
                               রাত হলেই একবার বাথরুমে যাই
                               চৌকাঠ ডিঙিয়ে যেখানে থমকে যাই , তা হল
                       ওপার
                               কারণ এখানেই আমি অতীত দেখতে পাই ,
                               চামড়ার সাথে চামড়ার নিবিঢ় সম্পর্ক দেখি ,
                               প্রমাণ পাই যে , আমি কতটা নীচে নামতে পারি
                               আর সুলগ্নার শরীর ছুঁয়ে কোথায় টেনে দিই
                               দাঁড়ি
                               এরপর সমগ্র মেঝেকে আর্দ্র করে ফিরে আসি
                                                                        এপারে ৷


                               সকালের রোদটা জানালার ফাঁকে তেমনই মসৃণ
                               যেমন রেললাইনের উর্ধ্বতল চকচক করে ৷
                               আমারই অলস চোখের ইশারা
                               অনুমতি দিয়েছে জানালার গরাদগুলিকে . . .
                               তারা যেন এই বেয়াড়া চামড়ায় দাগ আঁকে !
                               চাদরে ও বালিশে ঘাম ঘষে
                               যখন বিছানা থেকে উঠলাম , দেখলাম
                               কোমর ছাড়িয়ে প্যান্টটা . . .
                               সঠিক স্থানেই আটকে ৷ কোনওদিকে না বেঁকে
                               টলমল জলে মুখ দেখে আজ বিকেল খুঁজে পাই না !

                              
                               অকস্মাৎ আঙুল কাঁপিয়ে ছক কষে দেখি : মাথা ঘোরার আগে
                               কফির কাপে আলগা ঠোঁট রক্তের ছাপের মতো শুকিয়েছে ,
                               এখানেই আমি অতীত দেখতে পাই , আর
                               বিকেল খুঁজে পাই না ৷ তাই , অ-দেখা বিকেলের আগে
                               অপরাহ্নেই মৃত্যু চেয়েছি !