Tuesday, 5 August 2014

অস্তিত্বের শেষ বিজিটোন (২৭)


অস্তিত্বের শেষ বিজিটোন 
অঙ্কুর কুণ্ডু

       বারো বছরের রুম্পা অনেক কষ্টে খাটের নীচ থেকে হারমোনিয়ামটি টেনে আনার চেষ্টা করল , কষ্ট হচ্ছে খুব ৷ হারমোনিয়ামটির সাথে মাকড়সার জাল ও ঝুল জড়িয়ে যেন তার ওজন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যদিওবা ঝুলের ওজন খুব কম হলেও , রুম্পার মনের ওজন যেন আরও কমে গেছে ! অথচ তাকে গাইতেই হবে ৷ আজ তার জন্মদিন ; তার মা বায়না করেছে যে মেয়েকে গান গাইতে হবে , অন্ততঃ একটা. . . ! কিছুক্ষণ বাদেই টানা তিনবছর পরে রুম্পার কন্ঠে তান শুনতে পেয়েই মা-এর চোখের কোণটি চিকচিক করে উঠল ৷ কিন্তু ঐ আনন্দাশ্রুর স্থায়ীত্ব খুবই কম ; তানের পর মেয়ে যখন স্বরতান ধরলো , তখনই সে হাঁপাতে শুরু করল ৷ গতকাল সারারাত সে ঘুমাতে পারেনি , এইরকম শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল , মাঝে-মাঝেই হয় !

        ক্লাস থ্রি-তে রুম্পা যখন প্রথমবার গুনগুন করেছিল , তখনই রুম্পার মা ও বাবা ওকে এই হারমোনিয়ামটি কিনে দিয়েছিল ৷ একবছর সে গানও শিখেছিল ৷ মিহি স্বরে যখন ও গান শুরু করত তখন ওর মা-বাবা পাশে বসে সে মুগ্ধতায় সে গান শুনত ৷ পাশেই খেলা করত ছোট্ট ভাইটি ৷ ক্লাস ফোরের মাঝামাঝি সময়ে এমনই এক জন্মদিনের পরের সকালে রুম্পা উঠে অপেক্ষা করছে যে কখন প্রতিদিনের মত ওর ভাই-এর মুখটি প্রথমে দেখবে ! রুম্পার একটি আলাদা ঘর ছিল ৷ ওর ভাই মা-বাবার মাঝেই ঘুমাত ৷ সেদিন রুম্পার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছিল ৷ দরজা খুলতেই চারিদিকের একটা সুগন্ধ যেন তাকে গিলতে এল ৷ চোখ খুলে প্রথমে সে ভাই-কে দেখল ৷ তবে ভাই-এর সাজানো মুখটি দেখেই তার গলাটি বুজে এল ৷ ভাই নেই , ভোরেই মারা গেছে , রুম্পার জন্মদিনের পরবর্তী প্রথম সকালেই ৷ এই শোক কাটতে না কাটতেই রুম্পার মা-বাবার জীবনে আরও একটা বিপর্যয় নেমে এল রুম্পার হার্টে ফুটোর মাধ্যমে ৷ ডাক্তারেরা সময় দিয়েছিলেন দুই বছর ; কিন্তু দুইবছর অনেকদিন আগেই পেরিয়েছে ৷ তাই ওদের মনে সাহসও এসেছে ৷ এখন রুম্পা মা-বাবার মাঝেই শুয়ে থাকে ৷

        আজ রুম্পার খুব ভালো কাটলেও , জন্মদিনটি এলেই ওর ভাই-এর জন্য ওর খুব কষ্ট হয় , কারণ পরদিনই তো অনাকাঙ্খিত মৃত্যুটি. . . জন্মদিনের উপহারস্বরূপ মা-বাবার কাছ থেকে রুম্পা একটি সুন্দর টেডি পেয়েছে ৷ ও টেডিটিকে ‘ভাই’ ডাকে ৷ কিন্তু রিটার্ন গিফট্ হিসেবে গান আজ উপহার দেওয়া হল না ; আগামীকাল হবে ! টেডি থুড়ি ভাই-কে পাশে নিয়ে সে শুয়ে শুয়ে বাবার মোবাইলে খেলার ছলে ঐ মোবাইল নম্বরেই ফোন করল ; স্বভাবতই বিজিটোন ! এরপর খেলতে খেলতে হঠাৎই চোখের পাতায় সেই ঘুম নেমে এল ৷ আবার সেই সকালবেলায় মা-বাবার মাঝে তাদের শেষ অস্তিত্বটুকু নিথর হয়ে রইল , টেডিও তো আদর পেল না আর !



No comments:

Post a Comment