Wednesday 17 February 2016

ঢাকে কাঠি বোধনের সুর তোলে না (৬৮)

ঢাকে কাঠি বোধনের সুর তোলে না
অঙ্কুর কুণ্ডু

        রোদ্দুরের বাবা আগের মতো দূর-দূরান্তে ঢাক বাজাতে যায় না ৷ বাড়িতেই থাকে চুপচাপ , একটা কোণে. . . ঢাকের চামড়াটাও ধীরে-ধীরে তার বুনোট হারিয়েছে ৷ রোদ্দুর যখন উচ্চ মাধ্যমিক্ দেবে , ঠিক তার আগের বছরেই ওর বাবা ওদের টাকা রোজগারের বড়ো উপায়টা বন্ধ করে দিয়েছেন ৷ এই তো চারবছর আগের কথা , রোদ্দুরদের বাড়িতে রেশনের চাল ছেড়ে প্রায় ২৮টাকার চাল আসত ; সাশ্রয়ের জন্য ওরা মাত্র একবেলা খেত ৷ বাড়িতে ইলেকট্রিক্ এসেছিল ৷ লন্ঠনের আলো ও গরমে খুব বেশিক্ষণ পড়তে পারত না রোদ্দুর ; এখন তাও ও রাত জেগে পড়তে পারে , যখন পড়ার চাপ খুব বেশি হয় , ইলেকট্রিকের খরচ বাঁচানোর জন্য পুনরায় লন্ঠনের সামনেই পড়তে বসে রোদ্দুর ৷ বিকেলে আগে পড়া হত না , গ্রামের লোকেরা বাবার ঢাক বাজানো শুনতে আসত ৷ এখন ও সবসময় পড়তে পারে ৷ বাবা যে পঙ্গু , তা নয় , আবার বোবাও নয় ; কিন্তু ওনার ইচ্ছা যে উনি আর ঢাক বাজাবেন না , অগত্যা এক টুকরো জমির ওপর নির্ভরশীল হয়ে রোদ্দুরের মা-কে ঝি-গিরি করে সংসার টানতে হয় ৷ বাবাকে আর কেউ ডাকতে আসে না , দূরে কোথাও ঢাক বাজানোর বরাত পেলেও বাবা আর কোথাও যায় না ৷ এদিকে ঘাড়ের ওপর ঋণের নিঃশ্বাস যেন বারবার গা ছুঁয়ে যৌন সম্পর্ক চায়ছে ৷ ঢাক যখন বাজানোই হয় না , তখন ঢাকটা রেখে কি লাভ ! তাই রোদ্দুর ঢাকটা একবার বেচতে চেয়েছিল , কিন্তু ঢাকের অবস্থা দেখে কেউ কিনতে রাজি হয় না , খদ্দের আসে , দেখে ও একবার ধপধপ্ করে ঢাক বাজিয়ে চলে যায় ৷

        আজ মহাষষ্ঠীর সকাল ; চারিদিকে দমবন্ধ করা পুজোর গন্ধ ৷ রোদ্দুরদের বাড়ির পাশের বড়ো মাঠটিতেও প্রতিবছরের মতো দুর্গাপুজো হচ্ছে ৷ ঢাক-কাঁসর-ঘন্টার শব্দে মাথা ঝিমঝিম্ করে ওর ৷ আগে এসব ভালো লাগতো ৷ এই তো বছর চারেক আগের কথা –বাবা দিল্লী গিয়েছিল দুর্গাপুজোয় ঢাকিদের দলে ৷ রোদ্দুর কোনোদিন কলকাতাই চোখে দেখেনি ৷ দিল্লী শুনে বাবার কাছে বায়না করেছিল ও , যাতে ওর বাবা ওকে নিয়ে যায় ! কিন্তু রোদ্দুরকে নিয়ে যায়নি ওর বাবা ; সে রোদ্দুরের কি কান্না ! সেইবার বাবা ফিরতে রোদ্দুর তিনদিন কথা বলেনি ৷ পরের বছর যদিওবা বাবার সাথে গিয়েছিল মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ৷ জায়গাটা ভালো , পাশ দিয়ে গঙ্গা বয়ে যায় ৷ বহরমপুরের মন্ডপগুলো বিভিন্ন থিমের আদলে তৈরী ছিল ৷ সবচেয়ে বড়ো কথা , মন্ডপগুলো পাটের সুতো , কাগজ , প্লাস্টিকের কাপ , খড় দিয়ে তৈরী করা হয়েছিল ৷ ঢাকিদের দলে বাবা সেইবার নেতৃত্ব দিয়েছিল ৷ রোদ্দুর মাঝে-মাঝেই বাবার জন্য গর্ব অনুভব করে , বাবা কি অপূর্ব বাজাত ! রোদ্দুর অনেকবার শেখার চেষ্টা করেও পারেনি ৷ সেইবার একাদশীর সন্ধ্যায় গঙ্গায় বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বহরমপুরের এক মন্ডপের প্রতিমাকে ৷ সকলে নাচছিল , গাইছিল , বলছিল ‘আসছে বছর আবার হবে’ ৷ বাবা ঢাক বাজাচ্ছিল প্রতিমার পাশেই ৷ কিছুক্ষণ পরেই প্রতিমা বিসর্জন হয় গেল ৷ সিঁদুরে-সিঁদুরে চারিদিক ছেয়ে গিয়েছিল ৷ সকলে গঙ্গার জল মাথায় নিচ্ছিল ৷ রোদ্দুরের বাবাও গেল একটু জল আনতে , ছেলের মাথায় দেবে বলে. . . পরেরদিন সকালে রোদ্দুর একা ওর গ্রামে ফিরল !


        তাই , ইদানীং , ঢাকের শব্দ শুনলে রোদ্দুরের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে ৷ বারবার কানে ভাসে ‘আসছে বছর আবার হবে’ ৷ হয় তো ! পরপর বছরগুলোতে আবার তার বাবার মৃত্যুর বছর ঘুরে আসে , সেখানে বোধন নেই , অথচ রোদ্দুরের মা-এর সাদা থানে রং লেগে আছে , অনেক পুরোনো , তাই হলদেটে ! রোদ্দুর ভাবে যে , ঢাকে কাঠি পড়লে সকলের মনে যখন বোধনের সুর বাজে , তখন তার ভাগ্যেই কেন এমন ! আচ্ছা , দেবী দুর্গা কি তাকে দেখলে ওই বড়ো-বড়ো চোখেই তাকায় , নাকি চোখ একটু বুজে আসে ! আজ চারিদিকে এত ঢাকের আওয়াজ , বাবা তো নড়তে পারে একটু ! ওর বাবা বাড়িতেই থাকে চুপচাপ , একটা কোণে , ছবি হয়ে ! রোদ্দুর একবার চেঁচিয়ে উঠল- ‘বাবা গো. . ও বাবা’ ৷ ঢাকে কাঠির আওয়াজে রোদ্দুরের চিৎকার চাপা পড়ে গেল , শরতের আকাশেও এক পশলা বৃষ্টি নেমে এল !

লেট্-ডিভোর্স (৬৭)

লেট্-ডিভোর্স
অঙ্কুর কুণ্ডু


     ১২ই ডিসেম্বর, এই দিনেই মিনির বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়৷ তিনবছর হয়ে গেল, এই দিনটি ঘুরে-ফিরে এলেই মিনির গলা বুজে আসে, গাল মুছতে-মুছতে ভুলেই যায় যে ওর হাতভর্তি ফোসকায় ডাক্তার জল লাগাতে নিষেধ করেছে৷ গত চারদিন ধরে এই ‘GUARDIAN’ হোমই হল মিনির বর্তমান ঠিকানা৷ মিনির যখন দশ, তখনই ও মা-বাবার থেকে আলাদা হয়৷ ডিভোর্সের পরে মিনি বারবার ফিরে যেতে চেয়েছে মা-বাবার কোলে; কিন্তু তাদের চাহিদা ছিল না৷ অথচ ছোট থেকেই মিনি দেখেছে তার মা বাবার মধ্যে কখনও কথা কাটাকাটি হয়নি৷ মিনিকে কাকিমার বাড়িতে রেখে মিনির বাবা-মা ঘুরতে যাওয়ার পর থেকেই ওদের ডিভোর্স৷

     বাবা-মায়ের ডিভোর্সের পরে মিনি কাকিমার বাড়িতেই থাকতে শুরু করে৷ বাইরের বাজার ও রেশন থেকে শুরু করে ঘর মোছা ও বাসন মাজা প্রায় সব কাজ মিনিকেই করতে হত৷ এত কাজের মধ্যে থেকে মিনির পড়াশুনা আর এগোয়নি৷ এই তো কিছুদিন আগে খুড়তুতো ভাইয়ের বইগুলো উল্টে-পাল্টে দেখছিল বলে কাকিমা হাতের তালুতে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল৷ কাকিমার বয়স প্রায় পঞ্চান্ন, বেরোনোর আগে মিনি যন্ত্রণা সত্ত্বেও কঁকিয়ে বলেছিল “কাকি, তুমি তো এত কাজ একা করতে পারবে না, আমি আর কোনোদিন বই ছোঁব না, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও৷” মিনির ‘কাকি’ একজন নতুন কাজের লোক পেয়ে গেছে, যে মিনির থেকে বড়ো এবং ওর থেকে বেশি কাজ অনেক ভালোভাবে করতে পারে৷


     মিনির স্বপ্ন ছিল বড়ো হয়ে ডাক্তার হবে এবং মায়ের বাতের ব্যথাটা সারিয়ে তুলবে৷ মিনি দেখেছিল এক-দু’দিন মা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারত না৷ মিনিকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকত পেইন-কিলার খেয়ে৷ মাঝে-মাঝে মিনি মুখ তুলে দেখত, মায়ের বুজে রাখা চোখের পাশ থেকে জল গড়াচ্ছে৷ মা কখন ঘুমিয়ে পড়ত ও কখন চোখের পাশের জল শুকিয়ে যেত, তার সাক্ষী ছিল মিনি৷ কিন্তু মাকে সারিয়ে তোলা হল না মিনির৷ মায়ের ব্যথা তিনবছর আগেই কমে গেছে, যখন দার্জিলিঙের খাদে বাবা-মা গাড়ি সমেত পড়ে মারা গিয়েছিল৷ ওদের এই ডিভোর্সটা মিনির তিন-চারবছরে হলে, হয়তো এতটা গলা বুজে আসত না মিনির৷ ডিভোর্সের ডেট্ পিছিয়ে লেট্ হয়ে গেল৷ 

সৌমনা, আমাকে টেনে তোলো (৬৬)

সৌমনা, আমাকে টেনে তোলো
অঙ্কুর কুণ্ডু

                 
                  বকুলের গন্ধে যখন এলিয়ে পড়বে মাথা-
                  আমার কাঁধে তুমি নিঃশ্বাস রেখো,
                         আমি গোপন রাখবো
                  আমাকে তোমার ছোঁয়া, তারপর বুক খুঁজে
                  এলিয়ে পড়বে মাথা৷

                  দালান জুড়ে শান্তি নেই, কারা যেন
                  সূর্যের রং রেখেছে ছড়িয়ে,
                         বাকি ছিল উত্তাপ
                  তাও ছড়িয়ে ছিলাম লোম ছিঁড়ে,
                  কারা যেন লালা কেটে স্কার্ফ বুনেছিল৷

                  সৌমনার নখে রং ছিল, ঠোঁটে ছিল
                  ওর নীচের ঠোঁট,
                         হৃদয় ছিল দুর্বল
                  তাই আমাকে টেনে তোলো, ঘুমিয়ে পড়া
                  রাতের থেকে তোমার নীচের ঠোঁটটা ভালো৷

                  বৃষ্টি এলে স্বস্তি কোথায়, হালকা গাল
                  যখন ছোঁবে তোমার মাথায়,
                         আমি থমকে যাবো
                  সৌমনা, আমাকে টেনে তোলো, তোমার

                  শরীর থেকে মনে, মন থেকে কনকচাঁপার হারে৷

আশার... (৬৫)

আশার...
অঙ্কুর কুণ্ডু

                     
                  কিছু আলগা চোখ ডাকে রাতজুড়ে-
                  ভাঙা স্বপ্নরা গড়ে ডাকনামে৷
                  লালচে সিঁথি যদি নীল হয় হোক না,
                  পাকা চুলের কাজ আজও শেষ হয় না৷

                  ধুয়ে মনটাকে কিছু চাঁদমামা-
                  আসে টিপ দিতে ভুলে সন্ধ্যেতে৷
                  তবু রাত্তিরের সব রূপকথা,
                  হয়ে চুপকথা ডুব মারে নির্দল প্রার্থী হয়ে৷
                 
                  ভুলে পাশবালিশ কিছু সংসারের-
                  সাড়া হয় না কিছু পথভোলা চিৎকারের৷
                  কিছু চুল রাস্তায় ওড়ে ব্যর্থতায়,
                  ভ্রু কুঁচকে যায় পৌষের শীতলতায়৷

                  চলে মেঘের দেশ ভুলে হারাবার ক্লেশ-
                  সব গল্পেরই হয় না কোনো শেষ৷
                  ঠোঁটগুলো যদি প্রিন্টের সংখ্যা বাড়িয়ে দিত,

                  বিবাগীদের হাতে একতারার বদলে গিটার বাজত৷

Thursday 30 April 2015

ঋতুপর্ণার না ফেরা দিন (৬৪)

ঋতুপর্ণার না ফেরা দিন
অঙ্কুর কুণ্ডু

                                 আল ধরে হাঁটতে গিয়ে থমকালো ঋতুপর্ণা ৷
                                 পিছন ফিরে দেখলো কাশ হয়ে উড়ছে
                                 না ফেরা দিনগুলোর বাতাস ; তারই মধ্যে
                                 কাঁপিয়ে গেল চোখে ভাইয়ের স্মৃতির একরাশ ,
                                 সামনের পুকুরপাড়ে কুড়ানো ইউসুফের বাস !

                                 ওখানে মানুষ হয়ে জন্মালে পুকুরের মাছ
                                 জলে বিনুনি বাঁধে ৷ ধারে দাঁড়ানো কলাপাতায়
                                 ধূলোরা নিজেদের খাবার রাঁধে ৷ মানুষ দেখলে ,
                                 ভিজে মাটির উঁচু ঢিবিতে দেখা যায়
                                 ঘাসের রোঁয়া ৷ ওরা কেবলই দেখে ধোঁয়া !

                                 মাথার ওপর নিঃসীম আকাশ হাঁ করে
                                 গপাগপ্ সেই ধোঁয়া গিলে যায় ৷ দুয়ার
                                 ভেঙে ঋতুপর্ণা ফোঁটা দিতে একছুটে
                                 এখানেই দাঁড়ায় ; তারপর ভিজে মাটি ,
                                 পা মাটি , মানুষ মাটি মাড়িয়ে নৈঃশব্দে পৌঁছায় !

                                 বাঁশঘেরা পুকুরপাড়ে ইউসুফকে যখন
                                 কাফন দেওয়া হল ; ঋতুপর্ণার কান্নার
                                 শোরগোল ঢাকা পড়ল হিন্দু-মুসলিম কড়চায় ৷
                                 ইউসুফের শরীরে তখন জল , ঋতুর চোখ
                                 ছলছল , ধোঁয়া হয়ে আত্মাটা বাড়াল কান্নার রোল ৷

                                 আল ধরে হাঁটতে গিয়ে থমকালো ঋতুপর্ণা
                                 পিছন ফিরে দেখলো কাশ হয়ে উড়ছে
                                 না ফেরা দিনগুলোর বাতাস ; ওখানে মৃত্যু গেলে
                                 জীবন ফেরে না , ঋতুপর্ণা ফিরে আসে , ফোঁটায়

                                 ইউসুফের ফিরতি উপহার প্রাণের ’পরে হাসে ৷      

মৃত্যুর পরে ছায়াটা নিয়ে যেও (৬৩)

মৃত্যুর পরে ছায়াটা নিয়ে যেও
অঙ্কুর কুণ্ডু

                                 মৃত্যু নামে এক বারান্দায় তুমি হেঁটে যেতে
                                 রোদের মাঝে ৷ সাথে ছিল ঝুল , লোহার
                                 গরাদ আর ছায়ারা নড়ত খাঁজে ৷
                                        শুনেছিলাম মৃত্যু সন্ন্যাস নিয়েছিল ,
                                        দেখেছিলাম মৃত্যু আবেগতাড়িত ,
                                        ছুঁয়েছিলাম মৃত্যু তোমারই ছায়া ভেবে ,
                                 তোমার যন্ত্রণা হত হিমালয়ের বরফ
                                 গলার মত ৷ সাঁঝবেলায় আমার
                                 তুলসীমঞ্চে দেখেছো প্রদীপ জ্বলে কত !

                                 খামখেয়ালী মেঘ রজনীগন্ধা নামে নেড়েছিল
                                 কড়া ৷ মদের বোতলে শিস্ মেরে
                                 জওয়ানির গান ধরত কিছু বখাটে ছোড়া ৷
                                        ফুল-সাজানো খাটে আমি মৃত্যুকে
                                        বলেছি ফিরে যেতে ; ওরা ফিরে
                                        গেল ,  শুধু ছায়াটা ফেল গেল ৷
                                 মাটির সোঁদা গন্ধে এপিটাফ ঢাকা ছিল
                                 সাদা চাদরের মত ৷ কখনও এলোপাথাড়ি ,
                                 আবার কখনও স্নিগ্ধ হত জড়ানোর ক্ষত

                                 আমি মৃত্যুর সাথে ভাব-ভাব খেলে -
                                 তোমাকে ছূঁড়ে দিতাম বানপ্রস্থে ,
                                 আমি ছায়াকে চুমু দিতাম গার্হস্থ্যে ৷

                                 শুনেছিলাম মৃত্যু সন্ন্যাস নিয়েছিল ৷
                                 দেখেছিলাম মৃত্যু জিতে যায় আবেগেও ৷
                                 তাই , তুমি মৃ্ত্যুর পরে ছায়াটা নিয়ে যেও ৷



Monday 27 April 2015

ল্যাবরেটরী –দুই কপাটের ঘর (৬২)

ল্যাবরেটরী –দুই কপাটের ঘর
অঙ্কুর কুণ্ডু

                                 এক কোণে পড়ে ফুল আঁকা স্কার্ফ -
                                 কোনো দামী সুগন্ধির আশ্চর্য ভালোবাসা
                                 ল্যাবরেটরীর কপাট বুজে দিত নিশ্চয় !
                                 ওভাবেই শাহনাজ্ পিঠ ঢেকে দিত খোলা চুলে -
                                        তারপর শুরু হত খেলার ছলে
                                        জেলিফিশ্ মাখামাখি ;
                                        আমার অবুঝ তর্জনীতে সুদর্শন চক্র
                                        হয়ে ঘুরত ওর প্রতিটা নিঃশ্বাস ৷

                                 ল্যাবরেটরীর গোলাপ দেওয়ালে
                                 কিলবিল করত শাহনাজকে না ছুঁতে পারার
                                 কাঁটা ৷ অবিরত চোখ যেত ওর চোখে
                                 কাজল-ঘাঁটা ৷ এরপর ঝটপট বৃষ্টির ঝটপটানি -
                                        ওর গালে জল বসত না ,
                                        ও চুল ওড়ালে কাঁধের সোনালী লোম
                                        মুখ মুড়ে বসত ৷ বৃষ্টি থামলে
                                        নৈঃশব্দ ভেঙে শাহনাজ্ নামাজ পড়ত ৷

                                 বিকেল সরতেই ল্যাবরেটরীর তালায়
                                 আটকে যেত বিষণ্ণতা ৷ দেওয়ালের চুন ঘষে
                                 জানিয়ে দিতাম ওখানে ঝুরোগল্প আছে
                                 গাঁথা ৷ তখন আমার শুকনো হাতে ঠান্ডা তালা -
                                        দরজা ফুঁড়ে যতদূর চোখ যেত ,
                                        সেখানে কেবলই নবারুণের ফ্যাতাড়ু
                                        উড়ে জানিয়ে দিত শাহনাজ্ নেই ৷
                                        ফেরার পথে- চোখে ওর আলগা ঠোঁট ৷

                                
                                 ল্যাবরেটরীর দুই কপাটের ফাঁকে
                                 নিভে থাকত শাহনাজ্ ও আমার
                                 নিঃশ্বাস ! নিঃশব্দ চরণে
                                 কিছু বাদুড় দোল খেত সিলিংয়ের ডালে !
                                 এখানে দু’টো মানুষের গন্ধে ভালোবাসা খেলে ৷
                                 শকুনের মুখে অ্যাসিড্ ঢেলে
                                 ক্ষারীয় চাতক হয়ে আমি খুঁজে যাই
                                 ঐ জেলিফিশের পাশে মুসলিম মেয়েটাকে !